শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন
বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি: জামালপুরের বকশীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সূর্যনগর নঈম মিয়ার বাজারে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজ না হওয়ায় বকশীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এই বাজারের জরাজীর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। এতে করে হাটবাজারে এসে ক্রেতা-বিক্রেতাদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এই বাজার থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি টাকার রাজস্ব পেলেও আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নঈম মিয়ার বাজারটি ঐহিত্যবাহী বাজার হলেও ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতারা বরাবরই সুবিধা বঞ্চিত হয়েছে। বকশীগঞ্জ উপজেলার সরকারি ১২ টি সরকারি হাটবাজারের মধ্যে এই বাজার টি অন্যতম। প্রতি বছর সরকার এই হাট বাজার থেকে কোটি টাকার উপরে রাজস্ব আদায় করে থাকেন। কিন্তু সে তুলনায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি নঈম মিয়ার বাজারে। এই হাটের দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই হাটের মধ্যে পানি জমে থাকে এবং কাদাযুক্ত হয়ে পড়ে। পানি ও কাদার মধ্য দিয়েই ক্রেতা-বিক্রেতাদের চলাচল করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
উপজেলার বৃহত্তম বাণিজ্যিক কেন্দ্র এই বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হলেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই। এ ছাড়া বাজারের গলিপথগুলো সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে সেড ঘর গুলো অকেজো হয়ে পড়েছেন। যেসব সেড ঘর এখনো আছে সেগুলোও আবার দখল করে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা । সেড ঘর গুলো সর্বশেষ কবে নাগাদ সংস্কার হয়েছিল তা কেউ বলতে পারেন না। প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার সাপ্তাহিক হাট বসে এই বাজারে। জামালপুর জেলার বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকেও বড় বড় পাইকার আসে এখানে।
এই বাজারের একমাত্র গণশৌচারগারটি আরো ১০ বছর আগে থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। নেই লাইটিং এর ব্যবস্থা। ব্যবসায়ীরা নিজস্ব উদ্যোগে স্ব স্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে নিজ উদ্যোগে লাইটিং এর ব্যবস্থা করেছেন। বাজারের গরুর হাটে ইজারাদারের জন্য বসার কোন ঘর নেই । একটি ঘর নির্মাণ হলেও সেটিও রয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। বিশেষ করে হাটবাজারটি সড়কের তুলনায় নিচু হওয়ায় দুভোগ পোহাতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় ধরণের কোন স্থাপনা নির্মাণ করা হয় নি এই বাজারে।
ব্যবসায়ীদের জন্য শুধুমাত্র একটি দ্বিতল ভবণ নির্মাণ করা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটি অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত হলেও যেন দেখার কেউ নেই।
সরকারিভাবে এই বাজারের নিরাপত্তার জন্য কোন পাহাড়াদার নেই। তবে ব্যবসায়ীদের নিজস্ব উদ্যোগে তিন জন পাহাড়াদার নিয়োগ করা হয়েছে।
বাজারের ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া জানান, এই বাজারের সার্বিক চিত্র সুন্দর করা হলে এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলে জামালপুর উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্ব পাবে। তিনি এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
নঈম মিয়ার বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম শাহীন জানান, এই হাট থেকে প্রতি বছর কোটি টাকা থেকে তারও বেশি রাজস্ব আদায় করা হয়। ইজারাদারদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব থাকায় গত চার বছর ধরে এই বাজারটি সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া সম্ভব হয় নি। ফলে রাজস্ব আদায় হলেও চোখে পড়ার মতো কোন উন্নয়ন হয় নি। তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যবসার পথ আরো সমৃদ্ধশালী করতে বাজারের ঐহিত্য ধরে রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুন মুন জাহান লিজা জানান, ঐহিত্যবাহী এই হাটের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে হাটের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।